কিভাবে দাওয়াতী কাজ করবেনঃ দাওয়াতী কাজের মূলনীতি

ইসলামের বিধান মানুষের কাছে সাধ্যমত পৌছিয়ে দেয়া তথা দাওয়াতী কাজ করা একজন মুসলমানের জন্য অাবশ্যক দায়িত্ব। আল্লাহ্‌ তায়ালা মানুষকে যেসব দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন তন্মধ্যে এটাও একটা অন্যতম দায়িত্ব।

আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ “তোমরাই হচ্ছো উত্তম জাতি; তোমাদেরকে মানবজাতির কল্যাণের জন্য বের করা হয়েছে। [তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে] তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ দেবে, অসৎকাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহ্‌ তায়ালার উপর ঈমান আনবে। (সূরা আলে ইমরানঃ ১১০)

অন্য আয়াতে আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন: “অবশ্যই তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎকাজে বাধা দেবে। আর ওরাই হল সফলকাম।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১০৪)

উপরোক্ত আয়াতের “একটি দল” সম্বন্ধে মুফাসসিরদের মতামত হল-”সমস্ত মুসলিম জাতি”। অর্থাৎ, সমস্ত মুসলিমের উপরই নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী এ দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। তারা যার যার অবস্থানে থেকেই ইসলামের সৌন্দর্যকে যতটুকু সম্ভব অন্য মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেবেন।

রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ “কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ!! তোমাদেরকে অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎকাজে বাধা দিতে হবে।অন্যথায় অচিরেই আল্লাহ্‌ তায়ালা তোমাদের উপর শাস্তি প্রেরণ করবেন।তখন তোমরা তার কাছে দুয়া করলেও তা কবুল করা হবে না। (তিরমিজি-২১৬৯, মুসনাদে আহমাদ-২৩৩০১, বায়হাকীঃ সুনানুল কুবরা-২০১৯৯, বায়হাকীঃ শুয়াবুল ঈমান-৭১৫২)

এ ছাড়াও দাওয়াতী কাজ করা ঈমানের দাবী।সৎকাজের আদেশ দেয়া ও অসৎকাজে বাধা দেয়া এবং মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকা সবগুলোই দাওয়াতী কাজের অন্তর্ভুক্ত !!এ কাজগুলো করা ঈমানের একটা অপরিহার্য দাবী।

রাসুল (সাঃ)বলেছেন:”তোমাদের কেউ যখন অন্যায়কাজ হতে দেখে সে যেন তার হাত দিয়ে তাকে প্রতিহত করে। যদি তাতে সক্ষম না হয় তাহলে তার মুখের কথা দিয়ে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে। তাতেও যদি সক্ষম না হয় তাহলে অন্তর দিয়ে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে। [অন্তর দিয়ে কাজটিকে ঘৃণা করার পাশাপাশি সেটা প্রতিহত করার জন্য চিন্তাভাবনা করবে] আর এটাই ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর।” (মুসলিম-৭৮, নাসায়ী-৫০০৮, মুসনাদে আহমাদ-১১১৫০,১১৪৬০, ১১৫১৪, সহীহ ইবনে হিব্বান-৩০৬, বায়হাকীঃ সুনানুল কুবরা-১১৫১৩, ১৪৫৪৮, বায়হাকীঃ শুয়াবুল ঈমান-২৮)

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসমুহের মাধ্যমে এটা স্পষ্ঠ প্রমাণিত হয় যে,দাওয়াতী কাজ করা মুসলিমের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটা কাজ।যা তাদের জীবনের একটা মিশন এবং সাধ্যমত সে দায়িত্ব পালন করা প্রত্যেকটা মুসলমানেরই দায়িত্ব।

অনেক মুসলিম ভাইবোন অভিযোগ করে থাকেন,তারা মানুষের কাছে ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান তুলে ধরলেও তারা তাদের কথা মানেন না বা ইসলামের সে বিধানকে পালন করেন না।তাদের কাছে ইসলামের বিধান আলোচনার অর্থই হচ্ছে নিজের মুল্যবান সময়কে নষ্ট করা।ওদের অন্তরে আল্লাহ্‌ তায়ালা মোহর মেরে দিয়েছেন। ওদেরকে অকারণে দাওয়াত দিয়ে কি হবে? অমুককে এত সুন্দর করে বুঝানোর পরও সে মানল না;তাকে কিভাবে বুঝাই?এরকম হাজারো অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায় আমাদের মুসলিম ভাইবোনদের কাছ থেকে।

সম্মানিত ভাইবোনেরা!!

শুধুমাত্র ইসলামের বাণীটাকে মানুষের কাছে পৌছিয়ে দিলেই হবে না;বরং সেটা পৌঁছানোর সময় বেশ কিছু বিষয়ের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।তবেই,দাওয়াতী কাজটা বেশী ফলপ্রসু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আপনি যদি হৃদয় উজাড় করে ভদ্রভাবে কাউকে একটা কথা বলেন তার ফল দাঁড়াবে এক রকম আর যদি একই কথা বলেন কর্কষ ও রুক্ষকন্ঠে তাহলে,তার ফলাফল দাড়াবে এর পুরাই বিপরীত।অহংকারমুক্ত হয়ে কথা বললে প্রভাব পড়বে একরকম আবার অহংকারের সহিত কথা বললে তা ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলবে।

তাই,দাওয়াতী কাজ করার সময় আমাদেরকে কিছু মূলনীতি মেনে চলতে হবে।তবেই আমাদের দাওয়াতী কাজ ফলপ্রসূ হবে ইনশাল্লাহ।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:”আপনি আপনার রবের দিকে [মানুষকে] আহ্বান করুন হিকমত (প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা) ও সদুপদেশের মাধ্যমে। আর তাদের সাথে বিতর্ক করুন সর্বোত্তম পন্থায়।(সুরা আন নাহালঃ ১২৫)

তাহলে,আসুন!!আমাদেরকে কিভাবে দাওয়াতী কাজ করতে হবে এবং আমাদেরকে দাওয়াতী কাজ করার সময় কি কি মুলনীতি মেনে চলতে হবে তা জেনে নিই।

দাওয়াতী কাজ করার সময় যে মুলনীতিগুলোর দিকে দৃষ্টি রাখা জরুরী সেগুলো সংক্ষেপে নিম্নে তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।

১।ইসলাম সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা থাকাঃ একজন দায়ীর দাওয়াতী কাজ করার সময় যে বিষয়ে কথা বলবেন সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত।অন্যথায় হয়ত তিনি না জানার কারণে সৎকাজে নিষেধ ও অসৎকাজের আদেশ দিয়ে ফেলতে পারেন। হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল কিংবা বৈধকে অবৈধ ও অবৈধকে বৈধ বলে ফেলতে পারেন।সেজন্য যে বিষয়ে তিনি কথা বলবেন সে ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে তার অবশ্যই একটা স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন:

“হে নবী (সাঃ) আপনি বলে দিন,এটাই আমার পথ।আমি ও আমার অনুসারীরা প্রমাণিত সত্য ও দৃঢ় বিশ্বাসের উপর থেকেই আল্লাহ্‌ তায়ালার দিকে মানুষকে আহ্বান করে থাকি।”(সুরা ইউসুফঃ১০৮)

২।ভাষা ব্যবহারে সতর্ক থাকাঃ একজন দায়ীকে অবশ্যই ভাষা ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।অন্যথায় তার দাওয়াতে মানুষ ইসলামের প্রতি আগ্রহী হবে না।যত ভালো ভালো কথাই তিনি বলুন না কেন তারা ভাষা মার্জিত না হলে তার কথা মানুষ শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।তার ভাষা কখনও কর্কষ কিংবা রুক্ষ হতে পারবে না।অন্যথায় তার কাছ থেকে মানুষেরা দূরে সরে যাবে।ফলে তার দ্বারা দাওয়াতী কাজ করা সম্ভবপর হবে না।

একজন দায়ীকে হতে হবে নম্র,ভদ্র ও মার্জিত।তিনি সর্বোত্তম পদ্ধতিতে মানুষের সাথে কথা বলবেন।তার কাছ থেকে ভদ্রতা বিবর্জিত কোন কিছু যেন না পাওয়া যায়।কেননা, এমন লোক সমাজে ঘৃণার পাত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।একজন দায়ীর কাছ থেকে সেটা কাম্য নয়।

আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন:”আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহের ফলেই আপনি তাদের প্রতি নম্রতা অবলম্বন করেছেন। আর আপনি যদি কর্কষকাভাষী কিংবা কঠোর হৃদয়সম্পন্ন হতেন, তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেত।” (সুরা আলে ইমরানঃ ১৫৯)

৩। অহংকার মুক্ত থাকাঃ অহংকার পতনের মূল। হাদীস শরিফে বলা হয়েছে, অহংকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একজন দায়ীকে অবশ্যই অহংকারমুক্ত থাকতে হবে। যেখানে একজন সাধারণ ব্যক্তির জন্য অহংকার দূষণীয় সেখানে একজন দায়ীর জন্য তো তা আরও বেশী দূষণীয় বলে গণ্য হবে।

একজন দায়ী অহংকার করলে মানুষ তার কাছ থেকে দাওয়াত গ্রহণ করবে না। কেননা, অহংকারী ব্যক্তিকে মানুষ ঘৃণার চোখে দেখে থাকে। আর একজন ঘৃণিত ব্যক্তির কাছ থেকে ইসলামের দাওয়াত মানুষ কখনও কামন করে না। তাই, একজন দায়ীকে অবশ্যই অহংকারমুক্ত হয়ে দাওয়াতী কাজ করতে হবে। বিশেষ করে দাওয়াতী কাজ করার সময় এদিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরী। দাওয়াত দেয়ার সময় তাকে কথা বলতে হবে নিজের অহংকারকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েই।

৪। ধমক দিয়ে কথা বলা যাবে নাঃ একজন দায়ীর জন্য এটা শোভনীয় নয় যে, তিনি ধমক দিয়ে কথাবার্তা বলবেন। একজন দায়ী যখন কোথাও ইসলামের কোন বিষয় নিয়ে মানুষের সামনে আলোচনা করবেন তখন অবশ্যই তাকে ধমক দিয়ে কথাবার্তা বলার রীতি সম্পূর্ণভাবে পরিহার করতে হবে। অন্যথায় দায়ী ও শ্রোতা তথা সাধারণ ব্যক্তির মাঝে দুরত্বের সৃষ্টি হয়; যা দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনেনা। বরং, তা ব্যক্তিকে দায়ীর কাছ থেকেই দূরে সরিয়ে দেয়।

৫। গীবত না করাঃ গীবত একটা সামাজিক ব্যাধি ও ইসলামের দৃষ্টিতে মহাপাপ। অপর মুসলিম ভাইয়ের এমন কোন দোষের কথা আলোচনা করার নামই গীবত যা শুনলে ব্যক্তি কষ্ট পাবে। গীবতকারীকে সবাই ঘৃণা করে থাকে। আল্লাহ্‌ তায়ালা গীবত করাকে নিজের মৃত ভাইয়ের পচা গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন।

আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ “তোমাদের কেউ যেন অন্যের গীবত না করে। তোমাদের কেউ কি নিজের মৃত ভাইয়ের [পচা ও গলিত] গোশত খেতে পছন্দ করে??”(সুরা হুজুরাতঃ ১২ )

একজন দায়ী কারও গীবত করলে তার কথার কোন ইতিবাচক প্রভাব ব্যক্তির মাঝে পড়বে না। কেননা, এখানেও দায়ীকে তারা ঘৃণার চোখে দেখবে।

৬। মানুষের সাথে মিশে যাওয়াঃ দাওয়াতী কাজের আরেকটা পদ্ধতি হচ্ছে দায়ী নিজেকে সাধারণ মানুষের মতই সামান্য একজন মানুষ হিসেবে গণ্য করবে। মানুষের মাঝে মিশে যাবে। মানুষ যেন মনে না করে যে, সে আমাদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে।

৭। মানুষের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করাঃ  দাওয়াতী কাজের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ দিক হচ্ছে মানুষের সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি করা। কারও সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে পারলে খুব সহজে তার কাছে দাওয়াত পৌঁছানো যায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা ফলপ্রসূও হয়।

কারও সাথে সম্পর্ক তৈরীর সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে তাকে খাওয়ানো। যদিও তা হয় সামান্য কিছু। অনেকে বলে থাকেন-মানুষের পেটে প্রবেশ করতে পারলেই তার সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি করা যায়।

আপনার বেশী কিছু করার সামর্থ্য না থাকলেও কাউকে যদি মাত্র ৫/১০ টাকা খরচ করে কিছু খাওয়াতে পারেন কিংবা বাড়ীতে দাওয়াত দিয়ে একবেলা খাওয়ান তবে, তার সাথে আপনার একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠবে। এ ছাড়াও কাউকে একটা উপহার দিলেও তার সাথে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। যদিও উপহারটির মুল্য কম হোক না কেন। সুসম্পর্ক গড়ে উঠলে খুবই সহজে তার কাছে দাওয়াতী কাজ করতে পারবেন।

৮। কারও বিরুদ্ধে কটুক্তি না করা: একজন দায়ী আরেকজন দায়ীর নামে কটুক্তি করলে মানুষের মনে দায়ীদের সম্বন্ধে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়। ফলে, তাদের সাথে দায়ীর মাঝে দুরত্ব বৃদ্ধি পায়। ফলে, তার দাওয়াতে তারা আগ্রহী হন না।

অতএব, কোন দায়ী যদি কোন বিষয়ে ভুল করে থাকেন তাহলে তার নামে কটুক্তি করা যাবে না। বরং, তার সমালোচনা করতে হবে স্থান কাল ও পাত্র ভেদে। আর অবশ্যই সমালোচনাটি হতে হবে একাডেমিক সমালোচনা। সর্বদা মনে রাখতে হবে সমালোচনার সময়  সমালোচিত ব্যক্তিকে যথাযথ সম্মান দিয়ে কথা বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ- এভাবে বলা যেতে পারে- আমাদের সম্মানিত ভাই, অমুক আলেম, আল্লাহ্‌ তায়ালা তার সম্মান বাড়িয়ে দিন… এমন কথা বলেছেন। আমি তার সাথে একমত নই এসব কারণে। এরপর তিনি নিজের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরতে পারেন। তাহলে,মানুষের মাঝে আর কোন ভুল বুঝাবুঝি অবশিষ্ট্য থাকবে না।

৯।অনুভুতিতে আঘাত দেয়া যাবে নাঃ যাদেরকে দাওয়াত দেয়া হবে তাদের অনুভুতিতে কোন আঘাত দেয়া যাবে না।অন্যথায় তারা প্রথম চান্সেই আপনার কাছ থেকে দুরে সরে যাবে।এ ক্ষেত্রে তাদের সাথে খোলা মন নিয়ে বসতে হবে।এরপর বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করতে হবে।তারা যেন বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারে সে সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।বিভিন্ন যুক্তি ও কুরআন হাদীস থেকে প্রমাণ উপস্থাপনের পরেই হয়ত তারা তাদের ভুল থেকে সরে আসবে ইনশাল্লাহ।

যেমন-ধরুন!কোন এক ভাই ভন্ড পীরের মুরীদ হয়েছে।তাকে কখনও বলা যাবে না যে,তোমার পীর তো ভন্ড।এতে হীতে বিপরীত হবে।কারণ,লোকটার মনে প্রাণে এ বিশ্বাস প্রথিত হয়ে গেছে যে,তার পীর ভালো।এজন্য তার সাথে বসে একান্তে পীরের বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।সমস্যাযুক্ত বিষয়ের প্রসঙ্গ  আসলে তাকে কুরআন ও হাদিস থেকে উদ্দৃতি এনে বলা যেতে পারে যে,আল্লাহ্‌ তো এমন বলেছেন,পবিত্র কুরআন এবং হাদিসে এমন বলা হয়েছে।তাহলে,এখানে আপনি কি বলবেন?নিজে অনর্গল বলে গেলে চলবে না;তাকেও বলা ও চিন্তা করার সুযোগ দিতে হবে।

মোটকথা,তার অনুভুতি ও বিশ্বাসে আঘাত না করে কুরআন,হাদীস ও যুক্তির মাধ্যমে তার অনুভুতি জাগ্রত করার চেষ্টা করতে হবে।তবেই,তার কাছে তার বিশ্বাসের অপরিপক্কতা ধরা পড়বে।তখন সে তা ছেড়ে দিয়ে হয়ত সত্যকে আকড়ে ধরবে।

১০।উদ্দিষ্ট বিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্য উল্লেখ করাঃ একজন  দায়ী যখন আল্লাহ্‌ তায়ালার কোন বিধান সম্বন্ধে কথা বলবেন তখন সেটার পিছনে ইসলামী শরীয়তের উদ্দেশ্যকে যথাসম্ভব তুলে ধরবেন।তার উপকারী দিকগুলো উল্লেখ করে যুক্তির আলোকে সেটাকে ব্যাখ্যা করবেন।তাহলে মানুষ সেদিকে আগ্রহী হয়ে উঠবে।পক্ষান্তরে,মাকাসেদে শারিয়াহ বা বিধান প্রণয়নে ইসলামী শরীয়তের উদ্দেশ্য না জানলে মানুষ সেদিকে কাংখিত পরিমাণে আকৃষ্ট হবে না।বিধানটাকে পালন করলেও সেটার ব্যাপারে হয়ত তার ধারণা ধোয়াটে থেকে যাবে।অথচ,ইসলাম চায় মানুষ ইসলামের বিধান সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনেই সেটা পালন করুক।অধিকাংশ বিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ্‌ তায়ালা পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন।কিছু জিনিসের উদ্দেশ্য ফুটে উঠেছে হাদীসে আবার কিছু বিধানের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে ইঙ্গিত এসেছে কুরআন ও হাদিসে।

যেমন- নামাজ সম্বন্ধে আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেছেন-এটা অসৎকাজ থেকে দুরে রাখে।রোজা সম্বন্ধে বলেছেন-এর উদ্দেশ্য হল মানুষের মনে যেন আল্লাহ্‌ তায়ালার ভয় জাগ্রত হয়।মদ হারাম হওয়ার কারণ-মানুষের মাঝে যেন গন্ডগোল ও রেষারেষি ইত্যাদির সৃষ্টি না হয়।যাকাতের উদ্দেশ্য হল-গরীবদেরকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা,ফিৎরার উদ্দেশ্য হল-ঈদের দিনে গরীবদেরকে অভাবমুক্ত করা।তবে,উপরোক্ত বিধানগুলোর পিছনে উপরোক্ত উদ্দেশ্য ছাড়াও অনেক কারণ রয়েছে।

সাথে সাথে এগুলো পালন না করার ভয়াবহ পরিণতি সম্বন্ধে আলোচনা করা যেতে পারে।

১১।বুঝার মানসিকতা তৈরি করাঃ মানুষকে শুধুমাত্র নিষিদ্ধ বিধানটাকে না বলে সাথে সাথে নিষিদ্ধ করার কারণগুলো তুলে ধরা দরকার। যেমন-”সুদ”; এটাকে আল্লাহ্‌ তায়ালা হারাম করার কারণ হচ্ছে-এর মাধ্যমে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষন করা হয়।

একজন অভাবী ব্যাংক কিংবা কোন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ ধার নেয়ার পর সেগুলোর উপরে নির্দিষ্ট পরিমাণে বেশী দিতে পরিশোধ করে। অভাবী অতিরিক্ত অর্থগুলো খুশি মনে নয় বরং বাধ্য হয়ে পরিশোধ করে। পরিশোধ না করলে ব্যাংক তার নামে মামলা করবে কিংবা সম্পত্তি ক্রোক করে নেবে। পক্ষান্তরে, ব্যক্তির কাছ থেকে ধার  নিলে হয়ত সমাজে লজ্জিত হতে হবে এই ভেবে অতিরিক্ত অর্থগুলো পরিশোধ করে।

এগুলো অফিসে ফাইল আটকিয়ে টাকা নেয়া কিংবা রাস্তায় দাড়িয়ে অস্ত্র ধরে সন্ত্রাসী কায়দায় টাকা ছিনিয়ে নেয়ার মতই একটা ডাকাতি। এজন্য বলা যেতে পারে, সুদ খাওয়া আর ডাকাতি করা সমান অপরাধ। কেননা, এখানেও ব্যক্তির কাছ থেকে জোর করে টাকা নেয়া হচ্ছে আবার ওদিকে সন্ত্রাসীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে অস্ত্র দেখিয়ে জোর করে টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে।

যখন ব্যাংকের কাছ থেকে একজন অভাবী ১ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করে। অপরদিকে একজন লোক ব্যাংকে ১ লক্ষ টাকা জমা রেখে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পায়। তখন অর্থ দাড়ায়- ব্যাংক ৩০ হাজার টাকা ছিনতাই করে ছিনতাইয়ের ২০ হাজার টাকা আমানতকারীকে দেয়, আর বলে-আমি যেহেতু ছিনতাইয়ের কাজটা সমাধা করলাম তাই, বাকী ১০ হাজার টাকা আমার। এখানে ব্যাংক টাকাগুলোকে কোন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেনি। ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে তার লাভের উপর অংশীদারিত্ব বৈধ হত!! আর কোন বিবেক সম্পন্ন মানুষ ছিনতাইয়ের সম্পদ থেকে অংশ নিতে পারে না। কেননা, এটা অবৈধ কাজ।

আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেছেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেও না। তবে, যদি [কোন হালাল পন্থায়] তোমাদের পরস্পর সন্তুষ্টির ভিত্তিতে হয় তাহলে তার কথা ভিন্ন।” (সুরা নিসাঃ ২৯)

এছাড়া রাসুল (সাঃ) বলেছেন: যে কর্জ কোন প্রকার উপকার টেনে নিয়ে আসে তাই সুদ!!

ইসলাম সুদ নামক ডাকাতি ও লুন্ঠনের মাধ্যমে মানুষের সম্পদকে অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করার অনুমোদন দেয় না। তবে, উপরোক্ত স্থলে ব্যক্তিকে যদি নগদ অর্থ না দিয়ে কন্ট্রাক্টর সেজে কাজটা করে দিত কিংবা সামগ্রী দোকান থেকে কিনে তার কাছে  লাভে বিক্রি করত তাহলে সেটা অবৈধ হত না। কেননা, সেটা কেনাবেচা হিসেবে গণ্য হত যা ইসলামে বৈধ।

আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন: “আর আল্লাহ্‌ তায়ালা ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।” (সুরা বাকারাঃ ২৭৫)

এভাবে ব্যক্তিকে বুঝিয়ে বলতে পারলে আশা করা যায় সে বাস্তবতা বুঝতে পেরে এগুলো থেকে বিরত থাকতে আগ্রহী হবে। উল্লেখ্য যে, হারাম কাজ থেকে দূরে না থাকার একটা অন্যতম কারণ হল-ব্যক্তি এটার ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন নয়।

১২।ধাপে ধাপে দাওয়াত দেয়াঃ দাওয়াতী কাজের একটা অন্যতম মূলনীতি হল-ধাপে ধাপে কোন বিধানের দাওয়াত দেয়া।একবারে কোন কঠিন বিধানের দাওয়াত দিলে ব্যক্তির উপর তা কঠিন হয়ে পড়ে।কিন্তু, ধাপে ধাপে সামনে অগ্রসর হলে আর সেটা কঠিন থাকে না। হিজাব, যাকাতের বিধান প্রণয়ন ও মদ হারাম হওয়ার মত বেশকিছু বিধান মানুষের কাছে এসেছে ধাপে ধাপে। মদ হারাম হয়েছে চারটি ধাপে।

প্রথমবার বলা হয়েছে-তোমরা খেজুর ও আঙ্গুর থেকে মদ ও ভালো খাদ্য হিসেবে গ্রহণ কর। (সুরা নাহালঃ ৬৭)

দ্বিতীয়ধাপে বলা হয়েছে- লোকেরা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে, তাদেরকে বলে দিন-ঐ দু’টির মধ্যে বিরাট ক্ষতিকর বিষয় রয়েছে এবং তাতে মানুষের জন্য কিছুটা উপকারও আছে।তবে,উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশী।(সুরা বাকারা:২১৯)

তৃতীয় ধাপে বলা হয়েছে-হে ঈমানদারগন! তোমরা মাতাল অবস্থায় নামাজের নিকটবর্তীও হইওনা; যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা কি বলছ তা নিজেরা উপলব্ধি করতে না পারো (যতক্ষণ না মাতাল অবস্থা দূর হয়ে যায়)। (সুরা নিসা:৪৩)

চতুর্থ ধাপে চুড়ান্তভাবে আয়াত নাযিল করে মদ নিষিদ্ধ করা হয়।সে আয়াতটি ছিল-হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয় মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ধারক তীরসমূহ (লটারী;যাতে একপক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়)এ গুলো সবই ঘৃণ্য শয়তানী কার্যকালাপ। এগুলো থেকে দূরে থাক,আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হতে পারবে।নিশ্চয় শয়তান চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি করতে এবং তোমাদেরকে আল্লাহ তায়ালার স্মরণ ও সালাত আদায় থেকে দুরে রাখতে। অতএব, তোমরা কি বিরত থাকবে???!!! (সুরা মায়েদাহ: ৯০-৯১)

অতএব, কেউ যদি আদৌ নামাজ আদায় না করে কিংবা কিছু কিছু ওয়াক্তের নামাজ বাদ দেয় তাহলে তাকে নামাজ আদায় করার জন্য বলতে হবে ধাপে ধাপে। তাকে প্রথমে ফরজ নামাজগুলো আদায় করার জন্য বলতে হবে। এভাবে যখন শুধু ফরজ নামাজ পড়ার অভ্যাস তার মাঝে চলে আসবে তখন সে নিজেই হয়ত সুন্নাত নামাজ পড়া শুরু করবে। কিন্তু, তাকে প্রথমেই যদি ফরজ, সুন্নাত, নফল সবগুলো নামাজ আদায় করতে বলা হয় তাহলে তার কাছে সেগুলো বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে ফলে সে হয়ত কয়েকদিন পরে নামাজ আদায় করাই ছেড়ে দেবে। কিন্তু, তাকে যদি বুঝানো হয়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ১৭ রাকাত ফরজ পড়তে মাত্র ১৭-২০ মিনিট সময় লাগবে; তাও আবার পাঁচবারে যথাক্রমে ২,৪,৪,৩,৪ রাকাত করে। এতে সময় লাগবে সর্বসাকুল্যে হয়ত ২০ মিনিট। পৃথিবীতে হয়ত এমন মানুষ খুব কমই আছেন যারা নামাজ পড়ার জন্য ৫ বারে ২০ মিনিট সময় দিতে পারবেন না। যারা নামাজ পড়ার দিক থেকে নতুন কিংবা যারা নতুন ইসলাম গ্রহণ করেছেন তাদের জন্য এ সুযোগ কাজে লাগানো যেতে পারে।

এছাড়াও হয়ত আপনি কাউকে হিজাব পরার দাওয়াত দেবেন তাকে বলতে পারেন পর্দার জন্য বোরকা পরা জরুরী নয়। বরং যেকোন মোটা কাপড় দিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখলেই পর্দার হক আদায় হয়ে যায়। আর মাহরামদের [যাদের সাথে স্থায়ীভাবে বিবাহ হারাম] সামনে মাথা, হাত না ঢেকে রাখলেও সমস্যা নেই। দেখবেন তারা আপনার কথা সহজেই শুনবে। কারণ, এটা পালন করা তার জন্য কঠিন নয়। কিন্তু, যদি আপনি কট্টরতা অবলম্বন করে বলেন, বোরকা পরতেই হবে; তাহলে দেখবেন হয়ত ৯০% মেয়েকে আপনি হিজাবের দিকে আনতেই পারবেন না।

অতএব, মানুষের কাছে খুব সহজে এবং ধাপে ধাপে ইসলামকে ব্যাখ্যা করে দিতে হবে। যেন তারা ইসলামকে কঠিন মনে না করে বসে।

আর যদি মেয়েটা এমন হয় যে, সে সারা শরীর ঢাকতে চায় না; তাকে প্রথমে বলা যেতে পারে যে, আপনাকে একটা কথা বলব ভেবে দেখবেন কথা দেন। এতে সে সহজ হয়ে যাবে। তখন বলবেন, আপনি হাফ হাতা পোশাকের পরিবর্তে ফুল হাতা পরেন। সম্ভব হলে তাকে এমন একটা পোশাক গিফটও করতে পারেন। এর কয়েকমাস পর যখন দেখবেন সে এটাকে অভ্যাসে পরিণত করেছে, তখন তাকে দ্বিতীয় দফা ঔষধ হিসেবে বলতে পারেন, ওড়না কিংবা স্কার্ফ তো আপনার আছেই পরপুরুষের সামনে ওড়নাটা একটু মাথার উপর দিবেন প্লিজ!! এরপরে ধাপে ধাপে তাকে পরিপূর্ণ পর্দা তথা মাথার চুল, কান, গলা ইত্যাদি ভালভাবে ঢেকে রাখার জন্য বলতে পারেন। এভাবে কাজ করতে পারলে আশা করা যায় তাদের কাছে এ বিষয়গুলো কঠিন বলে মনে হবে না। তারা সহজেই আপনার দাওয়াত গ্রহন করবে।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা প্রথমে জান্নাত ও জাহান্নামের কথা বলে মানুষকে ইসলামের দিকে নিয়ে এসেছেন। এরপর যখন তারা ইসলামের দিকে চলে আসল, (ইসলামের উপর অটল হয়ে গেল) তখন তিনি হালাল ও হারামের বিধান নাযিল করলেন। যদি তিনি প্রথমেই বলতেন: তোমরা মদ্যপান করো না। তারা বলত: আমরা কস্মিনকালেও মদ্যপান করা ছাড়ব না। যদি বলা হত ব্যভিচার করো না। তারা বলত-আমরা কখনও ব্যভিচার ছাড়ব না। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, তাফসীরে মুনীর, নুজামুদ দুরার ফি তানাসুবিল আয়াতি ওয়াস সুয়ার, তাফসীরে ইবনে রজব হাম্বলী)

১৩।হারামের সাথে বিকল্প হালালটিকেও জানাতে হবেঃ অনেক দায়ী একটা ভুল করেন আর তাহল তারা বলে থাকেন,অমুক জিনিসটি হারাম।কিন্তু,তার বিকল্প হালালটিকে অনেকেই স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন না।যেমন-বলা হয় ব্যাংক বা ব্যক্তি কাউকে ঋণ দিয়ে তাতে বেশী তথা সুদ নেয়,এটা হারাম।অথচ,এর কাছাকাছি একটা বিকল্প হালাল রয়েছে সেটা জানানোর প্রয়োজন বোধ করেন না।আর তাহল-যিনি ঋণ নিবেন তিনি কোন একটি কারণে ঋণ নেবেন।হয়ত তিনি বিল্ডিং তৈরীর জন্য ঋণ নিতে চাচ্ছেন।এখন ব্যাংক কিংবা ব্যক্তি তাকে নগদ টাকা না দিয়ে কন্ট্রাক্টর হিসেবে কিংবা ব্যক্তির যা প্রয়োজন তা দোকান থেকে কিনে তার কাছে লাভে বাকীতে বিক্রি করবেন।যা ক্রয় বিক্রয় হিসেবে গণ্য হবে এবং এটা বৈধ।

অনুরুপভাবে হয়ত কেউ গানের প্রতি আসক্ত।সে সর্বদা অপসংস্কৃতির গান শোনে।তাকে যদি বলা হয় ঐ গান শুনা হারাম।তাহলে এটুকুতে যথেষ্ঠ হবে না।কেননা,গান পাগলের কাছে গান থেকে দূরে থাকা কষ্টকর মনে হবে।সে জন্য  তাকে একই ধরণের সুস্থ সংস্কৃতি ও বৈধ গান দিয়ে নিবৃত্ত করতে হবে।তবেই তার সমস্যার সমাধান হবে।

দেশে সব ব্যাংক যদি সুদী লেনদেন করে তাহলে শুধু এতটুকু বললেই হবে না যে, এসব ব্যাংকের ব্যাংকিং যেহেতু সুদ নির্ভর তাই,তাদের সাথে লেনদেন করা হারাম। বরং,সম্ভব হলে ইসলামী শরীয়াভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।তাহলেই,  সমস্যার সমাধান হবে।আর সুদমুক্তভাবে ইসলামী শরীয়াভিত্তিক ব্যাংক চালু থাকলে সেগুলো দেখিয়ে দিতে হবে।মোটকথা,একজন দায়ী শুধুমাত্র সমস্যাগুলো দেখিয়ে দেবেন না বরং সমাধানও দেবেন।অন্যথায় দাওয়াতী কাজ আংশিক ও অসম্পুর্ণ থেকে যাবে।

১৪। শুধু ভয় দেখাবেনা সুসংবাদও দেবেঃ একজন দায়ী শুধুমাত্র মানুষকে জাহান্নামের ভয় দেখাবেন না বরং, তাকে জান্নাতের নেয়ামতরাজির কথাও স্মরণ করিয়ে দেবেন। কেননা, বারবার জাহান্নামের কথা শুনালে তারা নিরাশ হয়ে যেতে পারে। তাই, তাদেরকে জান্নাতে র নেয়ামতরাজির কথাও শোনাতে হবে।

রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ “তোমরা সহজ করে দাও। খবরদার! কঠিন করে দিও না। মানুষকে সুসংবাদ দাও তাদেরকে (বেশী বেশী জাহান্নাম ইত্যাদির ভয় দেখিয়ে) তাড়িয়ে দিও না।” (বুখারী, মুসলিম, ইবনে হিব্বান, ইবনে আবি শায়বা)

অতএব, একজন দায়ীকে অবশ্যই দাওয়াতী কাজ করার সময় ইসলামের বিধি-বিধান সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা থাকার পাশাপাশি উপরোক্ত বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে আশা করা যায় তার দাওয়াতী কাজ ফলপ্রসূ হবে ইনশাল্লাহ!!!

আল্লাহ্‌ তায়ালা একমাত্র তার সন্তুষ্টির জন্য আমাদের দাওয়াতী কাজকে কবুল করে নিন। আমীন।

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: