লা ইলাহা ইল্লাল্লাহা” এর গুরুত্ব ও মর্যাদা

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহা” এর গুরুত্ব যে কত অপরিসীম, এর মর্যাদা যে কত উচ্চ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ক্ষুদ্র পরিসরে তা বলে শেষ করার মত নয়। তবুও সংক্ষিপ্ত পরিসরে আমরা এ কালেমার গুরুত্ব এবং মর্যাদা তুলে ধরছি।
১. এটি ইসলামের মূল কালেমা। এর স্বাক্ষ্য দানই ইসলামে প্রবেশের একমাত্র রাস্তা। কেউ বুঝে শুনে এ কালেমার স্বাক্ষ্য দিলে সে হবে মুসলিম, আর অস্বীকার করলে সে হবে কাফির। এ হচ্ছে এমন এক কালেমা যা মানুষের ঈমান এবং কুফরীর মধ্যে পার্থক্য করে দেয়। সবারই একথা জানা আছে যে, একজন অন্য ধর্মাবলম্বী যদি ইসলামে আসতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই এ কালেমার স্বীকৃতি দিতে হয়। বর্তমানে যারা নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করছে তাদের জন্যও অবশ্যই জরুরী যে তারা বুঝে-শুনে এ কালেমার স্বাক্ষ্য দেবে অন্যথায় তাদেরও মুসলিম দাবী করা বৃথা হবে। রাসূল (সঃ) যখন মুয়ায(রাঃ) কে ইয়ামানে পাঠিয়েছিলেন তখন বলেছিলেন, নিশ্চয়ই তুমি আহলে কিতাবদের (ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের) এক সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ।সুতরাং তুমি প্রথমে তাদেরকে কালেমা ‘র দাওয়াত দিবে। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
২. নাবী-রাসুলদের মূল দাওয়াতই ছিল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহা” এর দিকে আহবান করা, যাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা মানব জাতির হেদায়েতের জন্য পাঠিয়েছিলেন।আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল পাঠাইনি তার কাছে এই ওহী ছাড়া যে,আমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই সুতরাং আমারই ইবাদত কর।” (সূরা, আম্বিয়া ২১:২৫)
সুতরাং এ কালেমার দাওয়াতই সর্বশ্রেষ্ঠ দাওয়াত, এ কালেমাকে মেনে নেয়াই হেদায়েতের রাস্তা গ্রহণ করা এবং সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যানকে মেনে নেয়া।
৩. কালেমা ইসলামের মূল ভিত্তি। ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির প্রথম ভিত্তি হচ্ছে শাহাদাতাইন বা দুটি বিষয়ে স্বাক্ষ্য দেয়া। প্রথম যে বিষয়ে স্বাক্ষ্য দিতে হয় তা হচ্ছে। আল্লাহর রাসুল বলেছেন:-“ইসলাম ভিত্তি পাঁচটি। এ স্বাক্ষ্য দেয়া যে, “আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসুল। সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, (আল্লাহর) ঘরের হাজ্জ আদায় করা এবং রমযান মাসে সিয়াম পালন করা।” (বুখারী, মুসলিম)
এটা যেহেতু ইসলামের মুল ভিত্তি, এখন কেউ যদি বলে আমি মুসলিম, আমার দ্বীন ইসলাম তাহলে অবশ্যই তাকে এ কালেমার স্বাক্ষ্য জেনে-শুনে দিতে হবে এবং এটাকে দৃঢ়ভাবে গ্রহন করতে হবে।
৪. কালেমা হচ্ছে ঈমানের সর্বোচ্চ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ শাখা। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সঃ) বলেন-
“ঈমানের শাখা সত্তুরটিরও কিছু বেশী। এর সর্বোচ্চ শাখা এ কথা স্বীকার করা । আর এর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া”। (বুখারী, মুসলিম)
এখন কেউ যদি ঈমান গ্রহন করতে চায় তবে অবশ্যই এ কালেমাকে স্বীকার করতে হবে। আর যারা কুফরীতে নিমজ্জিত থাকতে চায়, তারাই এ কালেমার স্বাক্ষ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
৫. কালেমা কে মেনে নেয়া এবং সে অনুযায়ী কাজ করা, বান্দার প্রতি আল্লাহর হক্। কারণ এ কালেমা স্বাক্ষ্য দানের মাধ্যমে বান্দাহ্ তাওহীদ কে মেনে নেয়। অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ্কে এক ও একক হিসেবে মেনে নেয় এবং যাবতীয় ইবাদত শুধু তাঁর জন্য নিবেদন করবে এবং তাঁর ইবাদতে কাউকে শরীক করবে না বলে স্বীকৃতি দেয়। রাসূল (সঃ) বলেছেন-
“বান্দার প্রতি আল্লাহর হক্ হচ্ছে তারা তাঁর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করবে না।” (মুসলিম, ইফাবা/৫০)
৬. এ কালেমার জন্য আল্লাহতায়ালা মানুষ এবং জ্বিনকে সৃষ্টি করেছেন। কারণ এ কালেমার স্বীকৃতির মাধ্যমে বান্দাহ্ ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর এককত্বকে মেনে নেয়। আল্লাহতায়ালা বলেছেনঃ
“আমি মানুষ এবং জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য”। (যারিয়াত, ৫১:৫৬)
আয়াতের ব্যাখ্যায় আলেমগণ বলেন “আমার (আল্লাহর) একত্বকে মেনে নেয়ার জন্যই আমি তাদের (মানুষ ও জ্বিন) সৃষ্টি করেছি।”
৭. এমন এক মহান কালেমা যার স্বাক্ষ্য স্বয়ং আল্লাহতায়ালা, ফেরেশতা এবং যারা জ্ঞানবান তারা দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেছেনঃ
“আল্লাহ্ স্বাক্ষ্য দেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ব্যতীত কোন হক্ ইলাহ নেই। ফেরেশতাগণ এবং জ্ঞানবান লোকেরা সততা ও ইনসাফের সাথে এ স্বাক্ষ্যই দিচ্ছে যে, প্রকৃতপক্ষে সেই মহা পরাক্রমশালী এবং বিজ্ঞানী ছাড়া কেহই ইলাহ হতে পারে না।” (আল ইমরানঃ ১৮)
আল্লাহ্ বলেছেন যারা জ্ঞানী তারা সততা এবং ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে এ কালেমার স্বাক্ষ্য দেয়। সুতরাং একথা স্পষ্ট যে যারা অজ্ঞ, মূর্খ, জাহেল তারাই এ কালেমার স্বাক্ষ্য দেয়া থেকে বিরত থাকে।
৮. এমন এক কালেমা যে, আসমান-যমীন এবং এবং এর মধ্যবর্তী যা কিছু আছে তা যদি এক পাল্লায় তোলা হয় আর কে অপর পাল্লায় তোলা হয় তবে এ পাল্লাই ভারী হবে।
হাদীসে এসেছে আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেছেন মুসা (আঃ) বলেন,
‘হে আমার রব আমাকে এমন কিছু শিক্ষা দিন যা দ্বারা আমি আপনাকে ডাকতে পারি এবং আপনার যিকর করতে পারি। আলাহ তা’য়ালা বললেন, “হে মুসা! বল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। মুসা (আঃ) বললেন, হে আমার রব আপনার সমস্ত বান্দারাতো ইহা বলে। আল্লাহ আহ্কামুল হাকিমিন, রাব্বুল আলামীন যিনি সব জানেন যেখানে আমরা কিছুই জানিনা, তিনি নাযিল করলেন, “হে মুসা! আমি ছাড়া সাত আকাশ এবং উহার মধ্যে যাহা কিছু আছে এবং সাত যমীন যদি পাল্লার এক দিকে স্থাপন করা হয় এবং অপর দিকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” কে স্থাপন করা হয় তবে দ্বিতীয় অংশটি ভারী হয়ে যাবে।’ (ইবনে হিব্বানঃ২৩২৩, আল-হাকিম ১/৫২৮)
৯. এ কালেমার স্বীকৃতি দেওয়া না দেওয়ার উপরই নির্ভর করে বান্দার সফলতা ব্যর্র্থতা। যে এ কালেমাকে মনে-প্রানে গ্রহন করল সে জান্নাত লাভ করবে । আর জান্নাত পাওয়া বান্দার অনেক বড় সাফল্য। আল্লাহতায়ালা বলেনঃ
“নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।এটা অনেক বড় সাফল্য।” (সূরা বুরুজ, ৮৫:১১)
আর এ কালেমার স্বাক্ষ্যদানকারী ব্যক্তি যে চুড়ান্ত ব্যর্থতা জাহান্নাম থেকে বেঁচে চুড়ান্ত সফলতা জান্নাত লাভ করবে। এ ব্যাপারে রাসূল (সঃ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে (মুসলিম, ইফাবা/২৩)
রাসূল (সঃ) আরও বলেন, “আল্লাহতায়ালা ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের আগুন হারাম করে দিয়েছেন যে একমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের জন্য- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ উচ্চারণ করেছে।” (বুখারী, মুসলিম)
মূলকথা হচ্ছে তাওহীদই ইসলামের শুরু ও শেষ, জাহেরী-বাতেনী এবং মুখ্য উদ্দেশ্য। আর ইহাই সকল রাসূল (আলাইহিস সালাম) এর দাওয়াত ছিল। এ তাওহীদ (কায়েম) এর লক্ষ্যে আল্লাহ্ তা‘আলা মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন, সকল নাবী-রাসূলদের প্রেরণ করেছেন এবং সব আসমানী কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। আর এ তাওহীদের কারণেই মানুষ মু‘মিন-কাফির, সৌভাগ্য-দূর্ভাগ্যে বিভক্ত হয়েছে। আর তাওহীদই বান্দাদের উপর সর্বপ্রথম ওয়াজিব। সর্বপ্রথম এর মাধ্যমেই ইসলামে প্রবেশ করে।এবং এ তাওহীদ নিয়েই দুনিয়া ত্যাগ করে।

 

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: