হজ্জের নিয়মাবলী

 হজ্জ হলো ইসলামের ৫টি রূকনের সর্বশেষ তথা পঞ্চম রূকন। ইহা একটি ইবাদত যা আত্মিক, মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ত্যাগ সমম্বয়ে গঠিত। প্রতিটি সামর্থবান ব্যক্তির উপর উহা পালন করা ফরয। কুরআনে এরশাদ হচেছঃ

“মানুষের উপর আল্লাহরঅধিকার এই যে, যারা এই ঘর পর্যন্ত আসার সমর্থ রাখে তারা ইহার হজ্জ পালন করবে।” (সূরা আল্ ইমরান-৯৭)

রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

“যে ব্যক্তি (হজ্জ ওমরা করার জন্য) এঘরে আসবে, অত:পর স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হবে না এবং পাপাচারে লিপ্ত হবে না, সে এমন (নিষ্পাপ) অবস্থায় ফিরে আসবে যেমন তার মাতা তাকে ভুমিষ্ট করেছিল।” (মুসলিম)

তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন:

“মসজিদে হারামে এক ছলাত অন্য মসজিদে এক লক্ষ ছালাতের চাইতে বেশী উত্তম।” (আহমাদ ও ইবনু মাজাহ্)

এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি বিশুদ্ধভাবে আদায়ের চেষ্টা করা একান্ত ভাবে অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে কুরআন- হাদীছের নির্যাস নিম্ন লিখিত সংক্ষিপ্ত বিষয়গুলি সকলের জন্য অনুসরণীয়ঃ

১) একনিষ্ঠতার সাথে শুধুমাত্র আল্লাহ্কে রাজী-খুশী করার জন্য হজ্জ পালন করা।

২) উহা পালনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের তরীকা ও পদ্ধতি অনুসরণ করা।

৩) হালাল বা বৈধ উপার্জন থেকে হজ্জ্বব্রত পালন করা।

৪) হজ্জ্বের বিধান সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন করা।

৫) যাবতীয় র্শিক, বিদআত ও পাপাচার থেকে বিরত থাকা।

হজ্জ ও উমরাহর কাজগুলি ধারাবাহিকভাবে নিম্ন রূপঃ

৬) ইহরামের পূর্বে শারীরিকভাবে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা তথা- নাভীমূল, বগলের লোম পরিস্কার করা, নখ কাটা।

৭) মিক্কাত থেকে ইহরাম বাঁধা। (ওয়াজিব)

৮) মীকাতে গিয়ে ইহরামের উদ্দেশ্যে প্রথমে গোসল করা।

৯) মাথা, দাড়ি বা শরীরে আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করা।

১০) সেলাই বিহীন দুটি কাপড়ে ইহরাম বাঁধা। (শুধু পূরুষদের জন্য)

১১) কাপড় দুটি সাদা হওয়া উত্তম।

১২) হজ্জ্ব বা উমরার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট মীকাত অতিক্রমের পূর্বে (অন্তরে) নিয়ত করে ইহ্রাম বাঁধা। (রুকন)

১৩) তামাত্তু হজ্জ্বের জন্য প্রথমে উমরাহ্ আদায় করা।

১৪) উমরার ইহ্রাম বাঁধার সময় বলাঃ ‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরাতান’।

১৫) কিরান হজ্জ্বের ইহররাম বাঁধার সময় বলাঃ ‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জান ওয়া উমরাতান’।

১৬) ইফরাদ হজ্জ্বের ইহরাম বাঁধার সময় বলাঃ ‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জান’।

১৭) রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের এর পঠিত তালবিয়া জোরে জোরে পাঠ করা।

১৮) তালবিয়াঃ (لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيْكَ لَكَ) ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইকা, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি‘য়মাতা লাকা ওয়াল্ মুল্ক্, লাশারীকা লাকা’।

১৯) অজু-গোসল করে পবিত্রতার সহিত মসজিদুল হারামে প্রবেশ করা।

২০) মসজিদে হারামে প্রবেশের পূর্বে তালবিয়া বলা বন্ধ করা।

২১) তাওয়াফের জন্য সরাসরি হজরে আসওয়াদের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

২২) তাওয়াফ শুরুর পূর্বে (পুরুষের জন্য) ইযতিবা করা। (ইহরামের কাপড় ডান বগলের নীচ দিয়ে নিয়ে বাম কাধের উপর রাখা) নামাযের সময় উভয় কাঁধ ঢেকে রাখা জরুরী।

২৩) بسم الله، الله أكبر‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আক্বার’ বলে হজরে আসওয়াদকে চুমু দিয়ে বা ইশারা করে তওয়াফ শুরু করা।

২৪) প্রথম তিন চক্করে রমল করা। (দ্রুত পদে চলা)

২৫) তাওয়াফ অবস্থায় কোন দু‘আ নির্দিষ্ট না করে যে কোন দু‘আ যিকির পাঠ করা।

২৬) আল্লাহর ঘর বাম দিকে রেখে তওয়াফ করা।

২৭) হাতিমের বাহির দিয়ে তওয়াফ করা।

২৮) রোক্নে ইয়ামানী ষ্পর্শ করা। তা না পারলে ইঙ্গিত না করেই চলতে থাকা।

২৯) রোকনে ইয়ামানী এবং হজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে এই দোয়া পড়াঃ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়া ক্কিনা আযাবান্নার।”

৩০) একাধারে সাত চক্কর পূর্ণ করা। (রুকন)

৩১) মাকামে ইবরাহীমের পিছনে ২ রাকাত নামায পড়া। (সেখানে সম্ভব না হলে মসজিদুল হারামের যে কোন স্থানে তা আদায় করা।

৩২) সূরা ফাতিহার পর প্রথম রাকাআতে সূরা কাফেরূন এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ইখলাছ পড়া।

৩৩) যমযম এর পানি পান করা এবং উহা মাথায় ঢালা।

৩৪) আবার হজরে আসওয়াদে চুমু দেয়া বা ইঙ্গিত করা।

৩৫) إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ “ইন্নাছ্ছাফা ওয়াল র্মাওয়াতা মিন শা‘আয়িরিল্লাহি” বলতে বলতে সাফা পাহাড়ে আরোহণ করা।

৩৬) ক্বিবলামুখি হয়ে দাঁড়িয়ে তাওহীদ, তাক্বীর, তাহমীদ ইত্যাদি পাঠ করা। অতঃপর তিনবার বলবে:

(لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَشَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ عَلىَ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ . لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ أنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وهَزَمَ الأحْزاَبَ وَحْدَهُ.)

এরপর জানা যে কোন দু‘আ পাঠ করবে।

৩৭) সবুজ বাতিদ্বয়ের মধ্যবর্তী অংশে (পুরুষদের) দৌড়ানো। (মহিলারা দৌড়াবে না।)

৩৮) ছাফা-মারওয়া সাঈ করার সময় কোন দোয়া নির্দিষ্ট না করে, জানা যে কোন দুআ পড়া।

৩৯) মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ করা।

৪০) সেখানেও ছাফা পাহাড়ের ন্যায় দু‘আ করা।

৪১) সাত বার সাঈ করা। (রুকন)

৪২) ছাফা থেকে মারওয়া গমণ ১ম চক্কর, মারওয়া থেকে ছাফা প্রত্যাবর্তন ২য় চক্কর। এভাবে ৭ম চক্কর মারওয়ায় এসে শেষ করা।

৪৩) তামাত্তুকারী মাথার চুল মুড়িয়ে বা খাটো করে হালাল হয়ে যাওয়া।

৪৪) ক্কিরাণ ও ইফরাদকারী ইহ্রাম অবস্থাতেই থেকে যাওয়া।

৮ই- জিল্ হজ্জের কার্যাবলীঃ

৪৫) এদিন প্রভাতে তামাত্তুকারী পূর্ব নিয়মে আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জ্বান বলে হজ্জ্বের ইহরাম বাঁধা। (রুকন)

৪৬) মিনায় গমন করে যোহর থেকে ফজর পাঁচ ওয়াক্ত নামায (চার রাকাআত বিশিষ্ট নামায) কছর করে আদায় করা।

৪৭) সেখানে রাত্রি যাপন করা।

৯ই- জিল্ হজ্জের কার্যাবলীঃ

৪৮) এদিন সূর্যদয়ের পর আরাফাতে গমন করা, এসময় অধিক পরিমাণে তালবিয়া ও তাকবীর পাঠ করা।

৪৯) দুপুর পর্যন্ত আরাফাত সীমানার বাইরে ‘নামেরা’ নামক স্থানে অবস্থান করা। (মুস্তাহাব)

৫০) সেখানে প্রদত্ব খোতবা শোনা। (মুস্তাহাব)

৫১) যোহর আছরের নামায যোহরের সময় এক আজানে দুই ইকামতে কছর করে আদায় করা।

৫২) দুই নামাযের মাঝে সুন্নত ইত্যাদি না পড়া।

৫৩) সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার পর আরাফাতে অবস্থান নেয়া। (রুকন)

৫৪) বেশী বেশী তালবিয়া, তাকবীর পাঠ করা এবং কি¦বলামুখী হয়ে হাত তুলে দু‘আয় মাশগুল থাকা।

৫৫) সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা। (ওয়াজিব)

৫৬) অতঃপর ধীর গতিতে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে গমন করা।

৫৭) সেখানে সর্বপ্রথম মাগরীব ও এশার নামায এক আজানে ও দুই ইকামতে আদায় করা।

৫৮) মুযদালিফায় রাত্রি যাপন করা। (ওয়াজিব)

৫৯) রাতে কোন প্রকার ইবাদতে মাশগুল না হয়ে সরাসরি ঘুমিয়ে পড়া।

৬০) ফজর নামায আদায় করে মাশআরুল হারামে কিবলামুখী হয়ে দু‘আ করা।

৬১) সূর্যদয়ের পূর্বে মিনার দিকে রাওয়ানা হওয়া।

৬২) ‘বাত্বনে মুহাসসার’ (মুযদালিফা ও মিনার মধ্যবর্তী অঞ্চল) নামক স্থানে দ্রুত গতিতে চলা।

১০ই – জিল্ হজ্জের কার্যাবলীঃ

৬৩) মুযদালিফা বা মিনার যে কোন স্থান থেকে ৭টি কংকর সংগ্রহ করা।

৬৪) বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পূর্বে তালবিয়া বন্ধ করা।

৬৫) সূর্যদয়ের পর উচ্চস্বরে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে বড় জামরায় একে একে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করা। (ওয়াজিব)

৬৬) মিনা বা মক্কার হারামের সীমানার মধ্যে যে কোন স্থানে কুরবানী করা। (তামাত্তু এবং ক্কিরাণকারীর জন্য ওয়াজিব)

৬৭) নিজ হাতে কুরবানী করা। (কুরবানীর টাকা দায়িত্বশীল ব্যাংকে দেয়াও বৈধ)

৬৮) সম্ভব হলে কুরবানী থেকে কিছু অংশ ভক্ষণ করা।

৬৯) ঈদের দিন ব্যতিত পরবর্তী তিন দিনও (১১, ১২, ১৩) কুরবানী করা বৈধ।

৭০) মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করে হালাল হওয়া। (মহিলাগণ চুলের অগ্রভাগ থেকে আঙ্গুলের গিরা সমপরিমাণ কাটবে।) (ওয়াজিব)

৭১) মক্কা গিয়ে রমল বিহীন তাওয়াফে ইফাযাহ্ করা। (রুকন)

৭২) তাওয়াফের পর পূর্বের ন্যায় দু রাকাআত নামায পড়া।

৭৩) তামাত্তু কারীর সাফা-মারওয়া সাঈ করা। (রুকন)

৭৪) ১০ তারিখের কাজগুলি (কংকর নিক্ষেপ, কুরবানী, মাথা মুন্ডান ও তওয়াফ) ধারাবাহিক ভাবে স¤পাদন করার চেষ্টা করা। (আগে পিছে হয়ে গেলে অসুবিধা নেই।)

৭৫) মিনায় প্রত্যাবর্তন করে ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ ১১ ও ১২ তারিখের রাত যাপন করা। (ওয়াজিব)

৭৬) ১১ ও ১২ তারিখ পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলার পর তিনটি জামরার প্রতিটিতে তাকবীরসহ সাতটি করে কংকর নিক্ষেপ করা। (ওয়াজিব)

৭৭) তিনটি জামরায় পাথর মারার ক্ষেত্রে ছোট ও মধ্যবর্তী জামরার পর সামনে বেড়ে কিবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে দুআ করা।

৭৮) কিন্তু বড় জামরাতে পাথর মেরে দাঁড়াবে না দু‘আও করতে হবে না।

৭৯) ১২ তারিখ মিনা ত্যাগ করার ইচ্ছা করলে সূর্যাস্তের পূর্বেই তা করতে হবে।

৮০) সূর্যাস্তের পর মিনায় থেকে গেলে সেই রাত্রি (মিনায়) যাপন করা ওয়াজিব, এবং পরবর্তী ১৩ তারিখ পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলার পর তিনটি জামরায় পাথর মারাও ওয়াজিব।

৮১) মক্কায় এসে রমল বিহিন বিদায়ী তওয়াফ করা। (ওয়াজিব)

কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণীয় বিষয়:

•অনেকে ইহরাম বাঁধার সময় থেকেই ইযতেবা তথা (ইহরামের কাপড় ডান বগলের নীচ দিয়ে নিয়ে বাম কাধের উপর রেখে দেয়, এমনকি ছালাতের সময়ও সেভাবেই থাকে। এরূপ করা সুন্নাতের পরিপন্থী। ইযতেবা শুধু তওয়াফের মূহুর্তে করা সুন্নাত, অন্য সময় নয়।

•কা’বা ঘরের তওয়াফ এবং ছাফা-মারওয়া সাঈ করার জন্য নির্দিষ্ট কোন দু’আ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। এসময় অনির্দিষ্টভাবে যে কোন দু’আ বা প্রার্থনা যে কোন ভাষায় করা যাবে। সুতরাং বিভিন্ন ধরনের কিতাবে যে সকল দু’আ লিখিত আছে- ১ম চক্করের দুআ……. ২য় চক্করের দু’আ ………. তা নি:সন্দেহে ভুল। কেননা এভাবে নির্দিষ্ট চক্করের জন্য নির্দিষ্ট দু’আ না রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পড়েছেন না তিনি পড়তে বলেছেন, না কোন ছাহাবী (রা:) এরূপ করেছেন।

•অনেকে ইহরাম বাঁধার উদ্দেশ্যে দু’রাকাআত ছালাত আদায় করে থাকে। মূলত: ইহরামের জন্য কোন ছালাত নেই। তবে কোন ফরয ছালাতের সময় হয়ে গেলে, উক্ত ছালাত আদায় করার পর ইহরাম বাঁধবে।

•১০ তারিখে তাওয়াফে ইফাযাহ্ করতে না পারলে পরবর্তীতে যে কোন সময় তা করতে পারবে। তবে ১৩ তারিখের মধ্যে আদায় করা উত্তম।

•প্রয়োজনে তাওয়াফে ইফাযাহ্র সাথে বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ত করলে উভয়টিই আদায় হয়ে যাবে।

•কোন অবস্থাতেই আরাফাতের ময়দান থেকে সূর্যাস্তের পূর্বে প্রস্থান বৈধ নয়।

•তামুত্তুকারীর কোন অবস্থাতেই এক সাঈ যথেষ্ট নয়।

•১০ তারিখের পূর্বে তওয়াফে ইফাযাহ্ করলে উহা আদায় হবে না।

•তানঈম বা মসজিদে আয়েশা বা ওমরাহ্ মসজিদ থেকে ঘন ঘন ইহরাম বেঁধে এসে নিজের জন্য বা আত্মিয় স্বজনের নামে ওমরাহ্ পালন করা বিধি সম্মত নয়। কেননা, একই সফরে এরূপ একাধিক ওমরাহ্ করা রাসুলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম, তাঁর সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) ও তাবেঈদের কারো থেকে সাব্যস্ত নেই। (বিস্তারিত দেখুন আল-মুগনী ৫/১৭)

•মসজিদে নববীর যিয়ারতঃ উহা মুস্তাহাব। সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্ নয় বা ওয়াজিব ফরযও নয়। আর উহা যিয়ারত করা হজ্জ্ব উমরার সামান্যতম অংশ বিশেষও নয়। সুতরাং শুধুমাত্র মদীনার মসজিদে ইবাদতের উদ্দেশ্যে সফর যায়েয (বৈধ)। অন্য কোন উদ্দেশ্যে (যেমন- নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের এর মাজার যিয়ারত বা সাহাবার (রাঃ) কবর যিয়ারত ইত্যাদি) সফর করা যায়েয নয়। তবে মদীনায় পৌঁছে যাওয়ার পর এগুলো যিয়ারত করতে কোন বাঁধা নেই। (বুখারী ও মুসলিম)

* ইহরাম অবস্থায় যা করা নিষিদ্ধ (১০টি):

১) সেলাইকৃত কাপড় পরা।

২) মুখ ঢাঁকা। (তবে মহিলাগণ বেগাণা পুরুষের সামনে মাথার উপর থেকে কাপড় ফেলে দিয়ে মুখ মণ্ডল ঢাকবে। মুখে নিকাব ব্যবহার করা যাবে না।)

৩) পুরুষদের মাথা ঢাঁকা।

৪) হাতমোজা পরিধান করা।(তবে মহিলাগণ বেগানা পুরুষের সামনে হাত মুজা পরিধান না করে তার পরিধেয় কাপড় দ্বারা হস্তদয় ঢাকবে।)

৫) নোখ, চুল ইত্যাদি কাটা।

৬) স্থলচর প্রাণী শিকার করা বা তা শিকার করার জন্য ইঙ্গিত করা।

৭) স্ত্রী সহবাস করা।

৮) কোন জিনিস কুড়ানো (হারাম এলাকায়)।

৯) বিয়ে করা বা বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া।

১০) সুগন্ধি ব্যবহার করা।

*হজ্জ ফরয হওয়ার শর্তাবলীঃ (৬টি)

১) ইসলাম (সূরা তাওবাহ্ঃ ৫৪)

২) জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া (আহমাদ, আবূ দাউদ, নাসায়ী)

৩) স্বাধীন হওয়া। (আহমাদ, আবূ দাউদ, নাসায়ী)

৪) বালেগ হওয়া। (আহমাদ, আবূ দাউদ, নাসায়ী)

৫) অর্থিক ও শারীরিক ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়া। (আল ইমরানঃ ৯৭)

৬) মহিলার জন্য স্বামী অথবা মাহরাম থাকা। (বুখারী ও মুসলিম)

* হজ্জ্বের রুকন ৪টিঃ

১) ইহরাম বাঁধা। ২) আরাফায় অবস্থান করা। ৩) তাওয়াফে ইফাযাহ্ করা। ৪) সাঈ করা।

* হজ্জের ওয়াজিব বিষয় হল ৮টিঃ

১) মীকাত হতে ইহরাম বাঁধা। ২) সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা। ৩) মুযদালিফায় রাত্রী যাপন করা। ৪) ১১, ১২ যিলহজ্জের রাত গুলি মিনায় যাপন করা। ৫) জামরায় পাথর মারা। ৬) কুরবানী করা। (তামাত্তু ও ক্বিরাণকারীদের জন্য) ৭) চুল কামানো বা ছোট করা। ৮) বিদায়ী তাওয়াফ করা। (তবে ঋতু ও নেফাস বিশিষ্ট মহিলাদের জন্য ইহা আবশ্যক নয়।)

মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে পবিত্র কুরআন এবং সহীহ্ হাদীস অনুযায়ী হজ্জ্ব পালন করে সৌভাগ্যশালীদের অন্তর্ভূক্ত করুন। আমীন!

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: